আল্লাহর এক নাম যেমন ‘রহীম’–দয়াশীল, তেমনি আরেক নাম ‘আযীয’–পরাক্রমশালী। আমাদের গুনাহের যে বিশাল স্তুপ, নাফরমানির যে দীর্ঘ তালিকা; স্পষ্টই আল্লাহর অসীম দয়া ও ক্ষমা ছাড়া মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। যেখানে স্বয়ং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে যাওয়ার জন্য আল্লাহর রহমতপ্রার্থী, সেখানে আমাদের মতো পাপীরা কত নিশ্চিন্তে বসে আছি!
আসলে তাওবার সাথে একজন মুমিনের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? গুনাহের কারণে কতটুকু সংকুচিত হওয়া উচিত? মুমিন তো গুনাহ হওয়া মাত্রই অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় রবের কাছে। অপরাধী গোলামের ন্যায় নুয়ে পড়ে মহামহিমের দরবারে। তবুও অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হৃদয় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কেবলই ভাবে—এ কঠিন গুনাহের ক্ষমা মিলবে কি!!
গুনাহের কারণে অন্তরে এক দাগ পড়ে যায়, যদি ফিরে আসা না হয় তবে সে দাগ থেকে জন্ম নেয় দগদগে ঘা। ধীরে ধীরে সে অন্তর মরে যায়। তখন ব্যক্তির অবস্থা এমন হয়—সে সবই দেখে, কিন্তু অন্তরে সত্যের ছাপ পড়ে না। সে সবই শোনে, কিন্তু সত্য তার অন্তরে পৌঁছায় না। ধীরে ধীরে সে পরিণত হয় জাহান্নামের জ্বালানিতে।
রমাদান মুমিনের জন্য বিরাট এক পাওয়া। অন্তরকে দাগমুক্ত করতে, মৃত অন্তরকে আবারও ইবাদতের সেচ দিয়ে সজীব করে তুলতে।
রমাদান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এক সুযোগ—আবদার আদায়ের, দোষ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রাপ্তির। কারণ, এ মাসে আল্লাহ অবারিত করে দেন ক্ষমার দরজা।
শিরক ছাড়া আর কোন গুনাহ করেছকরেছ তুমি? যত গুনাহই হোক, ক্ষমা তো একজনের কাছেই!
কত বড় গুনাহ করেছ তুমি? রবের ক্ষমার দরজা তারচেয়েও বড়!
কতটা কঠিন গুনাহ করেছ তুমি? প্রভুর দরবার যে তারচেয়েও উদার!
আল্লাহ চাইলে মাফ করতে পারেন যখন ইচ্ছে তখন, তবু কিছু কিছু সময়কে তিনি বিশেষায়িত করেছেন ক্ষমার জন্য। যেন বান্দা মাফ চাইতে উৎসাহী হয় এবং কালিমামাখা অন্তর অনুতাপের অশ্রুতে ধুয়ে মুছে শুভ্র হতে অনুপ্রেরিত হয়। সে সময়গুলোতে মাফ পাওয়ার আশাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। রমাদান তেমনই এক সময়। তাঁর পক্ষ থেকে এক উপহার, সুবর্ণ সুযোগ। শুদ্ধ হওয়ার, শুভ্রতায় আলোকিত হওয়ার, কালিমামুক্ত হৃদয় পাওয়ার।