আত-তিব্বুন নববি
মুসলিম মনীষীদের অবদানকে পুঁজি করেই আজকের আধুনিক পৃথিবী সর্বাঙ্গে পুর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে। এ কথা গবেষক মাত্রই অবগত এবং সত্যানুসন্ধানীদের নিকট স্বীকৃত। মহাকাশ গবেষণা, পৃথিবীর বুকে নানা প্রয়োজনীয় আধুনিক আবিষ্কার, শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এর ব্যতিক্রম নয়। মুসলিমগণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অর্জন করেছেন। বিশেষত সোনালী অতীতগুলোতে অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলিমগণ ভূত উন্নতি সাধন করেছেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আত-তিব্বুন নববি বা আল-ইলাজুল মুহাম্মাদি হলো শ্রেষ্ঠতম ও উপকারী চিকিৎসা।
যুগ যুগ ধরে ইবনু জাওযিয়্যাহ রহ.-এর রচিত ‘আত-তিব্বুন নববি' উলামাদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ৭৫১ হিজরি তথা আজ থেকে প্রায় ৭শ' (৬৯২) বছর পূর্বে ইবনু জাওযিয়্যাহ রহ. ইন্তেকাল করেন। অর্থাৎ অষ্টম হিজরির শুরুর দিকে তিনি এই গ্রন্থটি রচনা করেন। চমৎকার বিন্যাসপদ্ধতি ও সাবলীল উপস্থানের মাধ্যমে গ্রন্থটিতে চিকিৎসাব্যবস্থার নানারকম তথ্য-উপাত্ত সংকলন করেছেন।
আত-তিব্বুন নববি গ্রন্থের কিছু বৈশিষ্ট্য
এক্ষেত্রে ‘আত-তিব্বুন নববি' গ্রন্থটির বেশকিছু বেশিষ্ট্য রয়েছে।
১. অসংখ্য রোগের বর্ণনা প্রদান।
২. আরোগ্য লাভের মাধ্যম বা চিকিৎসাপদ্ধতি বর্ণনা।
৩. রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-খাবারের বর্ণনা।
৪. নির্ধারিত রোগের ক্ষেত্রে কুরআনে কারিম ও সহিহ হাদিস থেকে নির্দেশনা।
৫. যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক করণীয় বিষয়ক নির্দেশনা ।
৬. রুগীর সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তার বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা।
৭. আদর্শ চিকিৎসকের গুণাবলী ও করণীয়-বর্জনীয়র বর্ণনা।
৮. প্রতিটি বিষয়ের রেফারেন্স সহ আলোচনা।
৯. চিকিৎসা বিষয়ক ভুল ধারণা, কুসংস্কার ও জাল হাদিসের বিভ্রান্তি নিরাসন।
১০. আধুনিক ও প্রাচীন পদ্ধতির সমন্বয়ে চিকিৎসা বর্ণনা ইত্যাদি ।
রুকইয়াহ
‘রুকইয়াহ’ অর্থাৎ ইসলাম-সম্মত ঝাড়ফুঁক। তথা কুরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত দুআ এবং সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে জাদুটোনা, জিনের আসর, বদনজর ও বিভিন্ন শারীরিক-মানসিক রোগব্যাধির প্রতিকার করা। হাদীসটি খেয়াল করুন :
একদিন জিবরীল আ. রাসূল সা.-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ, আপনি কি (আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যার ব্যাপারে) অভিযোগ করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
জিবরীল আ. বললেন, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর নামে রুকইয়াহ করছি, সেই সব জিনিস থেকে—যা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। সকল প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদনজর থেকে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুক; আমি আল্লাহর নামে রুকইয়াহ করছি।’ (সহিহ মুসলিম)
আমাদের সমাজে নাজায়েজ ঝাঁড়ফুকের ছড়াছড়ি থাকলেও এ ব্যাপারে ইসলামি ঐতিহ্য ও শরীয়তের বিধিনিষেধের প্রতি উদাসীনতা খুবই প্রকট।
এই বইটিতে নিজের এবং অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি জিন, জাদু, বদনজর ও ঝাড়ফুঁক বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সহজ ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি, এটা আমাদের সবার জন্য উপকারী হবে।