ইসলামী জীবনব্যবস্থায় হাদীসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই হাদীসই হলো আল কুরআনের বাস্তব রূপ এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন দর্পন এবং শরী‘আতের দ্বিতীয় মূল ভিত্তি। হাদীস ব্যতীত কুরআন বুঝা এবং বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বক্তব্য ও কর্ম-পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যা হাদীসসমূহে সংরক্ষিত আছে। ঠিক এ কারণেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানা থেকে অদ্যবধি সর্বযুগে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে উম্মতের উলামাগণ কুরআন চর্চার সমান গুরুত্ব দিয়েই হাদীস চর্চা করেছেন। এর সংকলন, সংরক্ষণ ও প্রসারে বিরামহীনভাবে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবেই মুসলিমরা পেয়েছে সহীহ বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক, সুনান আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদির মতো বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনসমাদৃত হাদীসের সংকলনসমূহ। আল্লাহ তাঁদেরকে এবং তাদের মেহনতকে কবুল করুন। আমাদের আলোচ্য ‘রিয়াদুস সালেহীন’ গ্রন্থটি হাদীসের তেমনই একটি সংকলন। সংকলক ইমাম মুহিউদ্দিন আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া আন্-নববী ছিলেন তাঁর সময়কার শ্রেষ্ঠতম আলেম। সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় তাঁর রচিত ‘আল মিনহাজ’ গ্রন্থখানা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এতটাই গ্রহণযোগ্যতা ও খ্যাতি লাভ করেছিল যে, বিশ্বজোড়া মুহাদ্দিসিনে কেরাম তাঁকে এ জন্য ‘মুহিউদ্দিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক হাদীস সংকলনটি ইমাম নববীর আরেকটি অমর কীর্তি। সিহাহ সিত্তাহ-সহ অপরাপর হাদীস গ্রন্থসমূহ থেকে বিশুদ্ধ হাদীস বাছাই করে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেছেন এবং ফিকহী বিন্যাস অনুযায়ী এর পরিচ্ছদসমূহ সাজিয়েছেন। বিষয়ভিত্তিক যথোপযোগী হাদীসমূহের এমন সংকলন তাঁর আগে আর কেউ করেনি। তাঁর রচিত এই সংকলনটি বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য। ‘রিয়াদুস সালেহীন’ গ্রন্থে ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ প্রায় দুই হাজার হাদীস সন্নিবেশিত করেছেন। প্রতিটি পরিচ্ছেদের শুরুতে বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহ উল্লেখ করেছেন। প্রয়োজনে দূর্বোধ্য শব্দসমূহের অর্থ আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাদীসের সাথে দরকারী টীকা জুড়ে দিয়েছেন। সর্বস্তরের এবং সকল বয়সের বাংলাভাষীদের কথা বিবেচনায় রেখেই সংকলনটির অনুবাদ করা হয়েছে। ভাষাকে যথাসাধ্য সাবলীল ও সহজবোধ্য রাখার পাশাপাশি সর্বাবস্থায় হাদীসের মূল ইবারতকেই সতর্কতার সাথে অনুসরণ করা হয়েছে। কখনো বাড়তি কোনো শব্দ বা বাক্য সংযোজনের প্রয়োজন দেখা দিলে সেটা ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হয়েছে। শুদ্ধতার মানদণ্ডে সংকলনের প্রতিটি হাদীসের অবস্থান (তাখরীজ) ফুটনোটে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে শায়েখ নাসিরউদ্দিন আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ’র মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাঁর মেহনতকে কবুল করুন। ‘যঈফ’ হাদীসসমূহের হুকুম উল্লেখের সাথে সাথে এর যঈফ হওয়ার কারণও সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। কিছু কিছু হাদীস; যেগুলোর হুকুম নিয়ে বিভিন্ন যুগের মুহাদ্দিসিনে কেরামের মধ্যে মতভেদ বিদ্যমান আছে, সেক্ষেত্রে অধিকাংশের কিংবা অধিকতর গ্রহণযোগ্যদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি, গ্রন্থের অনুবাদ ও তাখরীজের সকল ক্ষেত্রেই ‘ইলমী আমানত’কে (اَلْأمَانَةُ الْعِلْمِيَّةِ) সংরক্ষণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।