আমাদের হৃদয় মনের মুকুট হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্যানুযায়ী কিয়ামত-পূর্বকালে গােনাহ ও পাপাচার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। বােধ করি—এখন চলছে সেই কাল। চারদিকে গােনাহের সয়লাব। বইছে পাপের সমুন্দর। অবাধ্যতার আস্ফালন। নাফরমানির জয়জয়কার। যারা নষ্ট পৃথিবীতে আজ তাদের রাজত্ব। যারা ভ্রষ্ট তারাই সেজে আছে সমাজের পথপ্রদর্শক। যারা শয়তানের দোসর রাষ্ট্রের সংসদে ক্রমাগত বাজছে তাদের হুক্কাহুয়া। যারা জালিম তারা সেজেছে মানবতার ফেরিওয়ালা। যারা হত্যাকারী তাদের শিয়রপাশে শােভা পায় ইনসাফের দাড়িপাল্লা। যারা ব্যভিচারী লম্পট তারা দিচ্ছে চারিত্রিক সার্টিফিকেট। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অসভ্যতা, বর্বরতা ও জাহেলিয়াতের সর্বোচ্চ সময় অতিক্রম করছে আমাদের বসবাসের দুনিয়া। ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতে আগুন রাখার মতােই কঠিন। বড় কঠিন। যতটুকু ঈমান হৃদয়ে থাকলে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা যায়, অতটুকুন ঈমানও অবশিষ্ট নেই আজ তথাকথিত মুমিনদের। অধিকাংশই কেবল জন্ম ও বংশতালিকায় মুমিন। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের কথা তারা বেমালুম ভুলে। গেছে। কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম তাদের স্মরণে জাগ্রত হয় না। পিতা চলে যাচ্ছে তিন টুকরাে সাদা কাফনে জড়িয়ে ছেলে তাকিয়ে আছে নির্বিকার। মেয়েকে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুগােসল কিন্তু গর্ভধারণকারী মা চেতনাহীন। নামধারী এ সমস্ত মুসলমানদের স্কন্ধে নিয়ে উম্মাহ আজ এক কঠিন ও দুঃসময় অতিক্রম করছে। হৃদয়ে বিশ্বাস করি এ কথা—উম্মাহর ভাগ্য পরিবর্তন হবে সেদিন মুসলমান যেদিন গােনাহের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঈমানের পরিচয়ে জাগ্রত হবে। আল্লাহর কসম! সেদিন বিজয় হবে উম্মাহর। মুক্তি পাবে চলমান নিপীড়নের ক্রান্তিকাল থেকে। ক্ষুদ্র জ্ঞানে অনুভব করি, বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর বিজয়ের প্রথম শর্ত হলাে পরিচয়হীন নামধারী মুসলমানদের হৃদয়ে ঈমানের চেতনা জাগরুক করা। অবাধ্যতা ও পাপাচার থেকে আনুগত্য ও আমলের আলােকিত কাফেলায় শামিল হওয়া। হ্যাঁ, এটিই আজ মুসলিম উম্মাহর প্রথম ও প্রধান কর্মসূচি।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালােবাসেন সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধারাবাহিক আয়ােজনের একটি উদ্যোগ। এ গ্রন্থ পড়ে একজন মানুষ যদি ফিরে আসে, মসজিদের কাতারে যদি আরও একজন নামাজির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে যেন উম্মাহর বিজয়-কাফেলার একজন সৈনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি হলাে। একজন মুসলমানের ফজরের নামাজ উম্মাহর বিজয়ের জন্য নুসরত-সাহায্য। তেমনি একজন মুসলমানের একটি গােনাহ উম্মাহর পরাজয়ের একটি কারণ। তাওবার অনুতপ্ত অশ্রুতে, অনুশােচনার দহনে একজন পাপী অন্তত ফিরে আসুক হৃদয় থেকে কামন করি।
শাইখ খালিদ আর-রাশিদ হাফিজাহুল্লাহ একজন খ্যাতিমান দাঈ। প্রাজ্ঞ আলেম। অবস্থানগত দিক দিয়ে আরববিশ্বের হলেও মূলত বিশ্বব্যাপী চলমান ছিল তার দাওয়াতের কার্যক্রম। দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দি থাকলেও প্রযুক্তির কল্যাণে আজও তার উদাত্ত আহ্বান উম্মাহকে জাগ্রত করছে। তার প্রতিটি বয়ান মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হচ্ছে। তার লেখা, তার লেকচার পথহারা মানুষের জীবনকে করছে দীপান্বিত। আলােকিত করছে গাফেল, উদাসীন মুসলমানদেরকে। আরব-তরুণদের প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। আরবের প্রজ্ঞাবান এই শাইখ বর্তমান সৌদি সরকারের রােষানলে কারাজীবন ভােগ করছেন। আরবের পবিত্র মাটিতে সিদ্দিকি চেতনার সত্যভাষণে ভীত হয়ে কাপুরুষ সৌদি-শাসক তাকে বন্দি করে। এক দুই করে পেরিয়ে গেছে আজ দীর্ঘ পনের বছর। মহান রবের নিকট দোয়া করি এবং সকলের দোয়া কামনা করি—তিনি যেন সমকালীন বিশ্বের মহান এই আলেম ও দাঈকে জালিমের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত করে পুনরায় উম্মাহর খেদমতে আত্মনিয়ােগ করার তাওফিক দান করেন। তার ভরাট কণ্ঠের হৃদয় বিদীর্ণ আহ্বান যেন ফের মুসলিম উম্মাহর সদস্যদের কর্ণকোহরে ধ্বনিত হয়। মুসলিম যুব ও তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে যেন আবারাে ঢেউ তুলে তার উদাত্ত আহ্বান। খালিদ বিন ওয়ালিদ ও মুসআব ইবনে উমায়ের রা.-এর চেতনা ও রক্তকে ধারণকারী বীর সৈনিক আপনি দীর্ঘজীবী হােন। জয় হােক আপনার। বােধােদয় হােক আপনার শত্রুদের। মাত্র একটি বয়ানের জন্য তারা দীর্ঘ পনের বছর আপনাকে অন্ধকার ঘৃহে বন্দি করে রেখেছে। বঞ্চিত করছে উম্মাহর অজস্র সদ্যস্যকে আপনার দরদীয় প্রেমার্ত কণ্ঠ থেকে।