আমাদের এলাকায় এক আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি ছিল। সে মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াহ দিতে খুব পছন্দ করতো। দিনের বেলা ব্যবসা, আর সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার মাসজিদে তালিম দিতো। অধিকাংশ সময় তাকে বিভিন্ন মানুষকে নসিহত করতে দেখা যেতো। সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তারাও বাবাকে খুব ভালোবাসে। কারণ সে তাদের কোনো আবদার অপূর্ণ রাখে না। যখন যা চায় দেয়। ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে, টাকা চাই!- সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছে। বংশের একমাত্র ছেলে। মেয়েদেরকেও যথেষ্ট আদর করতেন তিনি। যখন যে পোশাক-অলংকার চেয়েছে, দিতে কৃপণতা করেননি। ছোট থেকেই খুব আদর স্নেহ করেন তিনি।
ফলে দেখা গেল তার সন্তানেরা যখন বড় হলো, তখন সব কিছু পাল্টে গেল! যে মানুষটা সর্বদা দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বান করে, তার ঘরে দ্বীনের ছিটে ফোটা নেই! সে যখন এশার পর মাসজিদে দাঁড়িয়ে নসিহত করে, সে সময়ে তার স্ত্রী-মেয়েদেরকে দেখা যায় মাসজিদের পাশ দিয়েই বেপর্দাভাবে হেটে যাচ্ছে। ছেলেটা রাত করে বাড়ি ফেরে। শোনা যাচ্ছে সে নেশাও করে। কিন্তু বাপ বেচারা কিছুই বলতে পারেন না। একদিন এক সাথি মুরুব্বি তাকে বললেন, ‘ভাই সাহেব! আপনার মেয়েগুলো এখন তরুণী। ওদের ওপর তো পর্দা ফরজ হয়েছে। ছেলেটার ব্যাপারেও একটু খেয়াল করবেন। ওকে তো..” উনি হেসে হেসে উত্তর দিলেন, ‘আরে ভাই! আজকালকার যুগে একটু আধটু তো সাজবেই। আরো সময় যাক, বয়স হলে এমনিতেই বুঝে যাবে। ইসলামে জোর জবরদস্তি নেই।”
রাসুল ﷺ বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন: ১) মদ্যপায়ী ; ২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং ৩) দাইয়ুস।”(নাসাঈ, বুখারী)
দাইয়ুস হলো ঐ ব্যক্তি ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারে অশ্লীলতা ও পাপাচারের প্রশ্রয় দেয়, যার ভেতরে অশ্লীলতার প্রতি ঘৃণা নেই এবং স্ত্রী-সন্তানদেরকে ইসলামি বিধান, বিশেষত পর্দা মেনে চলতে বাধ্য করে না। তিনি দাইয়ুস বলে গণ্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো; যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে রূঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয়ের ফেরেশতারা নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনো আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না এবং যে নির্দেশ দেওয়া হয়, তা-ই পালন করে।” (সূরা আত-তাহরিম: ৬)তাই এবারের বই ‘নিজে বাঁচুন পরিবার বাঁচান’। বইটি পড়লে পাঠক জানতে পারবে, দ্বীন ইসলামে তার পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব কী? তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে করণীয়, বর্জনীয় সকল দিক নির্দেশনা নিয়ে এই বইটি রচনা করেছেন শায়খ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ।