১৮৫৭ সাল নানা কারণে আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। এর এক শ বছর আগে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা হারানোর মধ্য দিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষে শুরু হয়েছিল যে ইংরেজ শাসন, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল সেই শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সামগ্রিক সামরিক বিদ্রোহ।
কিন্তু ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ সফল হয়নি। স্বাধীনতার সুতীব্র বাসনা নিয়ে যে লড়াকু সৈনিকেরা সেদিন ইংরেজদের কামান আর বন্দুকের সামনে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিল, তাদের রক্তের ওপর গড়ে ওঠেছিল আরও এক শ বছরের ব্রিটিশ শাসন। বেগম হজরত মহল। যতটা দরকার ছিল, ইতিহাস তাঁকে ততখানি স্মরণ কখনোই করেনি। জন্মেছিলেন সাধারণ এক তাঁতীর ঘরে। শৈশব আর কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে লখনৌর চকবাজারে, অভিজাত বাঈজি মহলে। সেখান থেকেই নজরে পড়েন লখনৌর তৎকালীন মহারাজা ওয়াজিদ আলী শাহর। কিশোরী হজরত মহলের কাব্যপ্রতিভা এবং সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁকে নিজের চতুর্থ বেগম হিসেবে হেরেমে স্থান দেন।
সিপাহি বিদ্রোহের পর সবচে দীর্ঘ লড়াই লড়েছিলেন যে নারী, তিনি হজরত মহল। বিদ্রোহের এক বছরের মধ্যে লখনৌ হাতছাড়া হয়ে গেলে তিনি তাঁর অনুগত সিপাহিদের নিয়ে পালিয়ে যান উত্তর ভারতে। সেখান থেকেই লখনৌ পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ধীরে ধীরে ইংরেজ বাহিনী কব্জা করতে থাকে উত্তর ভারতের সকল দুর্গ। তিনি আরও উত্তরে চলে যেতে থাকেন। স্বাধীনতার শেষ আলোকরশ্মিকে জীবনদান করার লক্ষ্যে পার হয়ে আসেন বরফাবৃত পাহাড়, নদী আর জঙ্গল। তবু মাথানত করেননি ইংরেজ বশ্যতার সামনে।
হজরত মহলকে নিয়ে বাংলাভাষায় রচনা একদমই অপ্রতুল। বাংলাভাষী মানুষের কাছে তিনি অচেনা একজন। অথচ তাঁর সংগ্রামী জীবন জ্বল জ্বল করে জ্বলছে আমাদের ইতিহাসের হাজার গুলিস্তানে। ইন দ্য সিটি অব গোল্ড অ্যান্ড সিলভার : বিদ্রোহী বেগম গ্রন্থটি কেবল তাঁর জীবনকেই আলোকায়ন করেনি, বরং তুলে এনেছে সিপাহি বিদ্রোহের আনুপুঙ্খিক এক ধারাবর্ণনা। বিদ্রোহের সময়কার ঘটনাপঞ্জি লেখক এত সুনিপুণ ও তথ্যবহুল করে বর্ণনা করেছেন, প্রতিটি অনুচ্ছেদকে মনে হবে স্বাধীনতা সংগ্রামের একেকটি দলিল। এ কারণে ইতিহাস-অনুসন্ধানী পাঠকের জন্য এ বই অবশ্যপাঠ্য।
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের এক অসামান্য দালিলিক উপন্যাস। লখনৌ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী বেগম হজরতম মহলের লড়াকু জীবনের সংগ্রামী কাহিনি নিয়ে রচিত