একদিকে উলঙ্গ লালসা, আর অন্যদিকে উৎপীড়িতের নিঃশব্দ ক্ৰন্দন। শূন্যতার মধ্যে দেহহীন অস্তিত্বের এক আশ্চর্য আখ্যান এই ‘রাজকুমারী'। মোট পাঁচ খণ্ডের বিশাল আকারের উপন্যাস। এ উপন্যাস ঐতিহাসিক উপন্যাস-সাহিত্যে এক অভিনব মাত্ৰা সংযোজন। ড. করম হোসাইন শাহরাহি সেই পথেই হেঁটেছেন।
সত্যানুসন্ধানী ড. শাহরাহি বাস্তবতাকে আড়াল করে পাঠকনন্দিত হতে চাননি; বরং নিজে একজন পুরুষ হয়েও নিদ্বিধায় উদঘাটন করেছেন ধর্মের নামে অনাচারে অভ্যস্ত পুরুষজাতির বর্বরতা ও নীচতার অতল পাপাচার। কিছু কিছু নারী-পুরুষ যে পশুরই এক রূপ এবং দেশ-কাল-পাত্র ভেদে খুব বেশি। পার্থক্য তাদের মধ্যে নেই এবং কখনো কখনো মুখোশের অন্তরালেও সেই একই পশুবৃত্তিচর্চাতেই তারা নিবেদিত- সে কথাই উঠে এসেছে “রাজকুমারী'তে।
উপন্যাসটির বিভিন্ন আঙিনায় আমরা দেখতে থাকি- প্রশস্ত বাহুর অধিকারী ওই মুসলিম যোদ্ধারা জমিনের যে প্ৰান্ত দিয়ে হাঁটতে শুরু করে সে জমিনের প্রশস্ততা যেন মাথা নুইয়ে দেয় তাদের চরণতলে। এদের কারও তরবারি কোষমুক্ত হলে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিজলিরা আত্মগোপন করে গহিন অন্ধকারে। পাহাড়ের মতো অটল তাদের দৃঢ়তা। এই জানবাজ মুজাহিদদের কপালে সর্বদা লেগে থাকে সফলতার আলোকরেখা- সূর্যের কিরণের চেয়েও অধিক তেজি যার রশ্মি।
আরেক পক্ষ সাম্প্রদায়িকতা আর ঘূণার যে আগুন জ্বলিয়ে দিয়েছে, তারা কি জানে তার শিখা কতোদূর গড়িয়েছে? কতো লাখ বনি আদম পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে সেই আগুনে! জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কতো বাড়ি-ঘর। এ সবই ধর্মের নামে অনাচারে অভ্যন্তদের পাপের ফল। যারা একবারের জন্যও ভাবেনি যে, তাদের এই পৈশাচিকতা সম্পর্কে মহান সৃষ্টিকর্তা বেশ অবগত। তার শান্তি তো বড়োই ভয়াবহ! অগণিত নিষ্পাপ প্ৰাণের প্রবাহিত রক্ত ইনসাফ প্রার্থনা করছে। এমন সময়ে ত্ৰাতা হয়ে আসেন সুলতান আলি কুলি খান, নাদের খান, স্বামী মনোহর লাল, শেখর, ফিরোজ খান, সাইয়িদ হায়দার ইমাম, রাম দাস, গোপালজিসহ আরও অনেকে।