এটি একধরনের আত্মজীবনীমূলক বই। অনেক আলিম এবং লেখকই তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে এমন গ্রন্থ রচনা করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদওয়ী (মৃত্যু ১৯৯৯), মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদী (মৃত্যু ১৯৭৭), মাওলানা মঞ্জুর নুমানী (মৃত্যু ১৯৯৭) এবং মুহাম্মাদ আসাদ (মৃত্যু ১৯৯২) প্রমুখ। এই গ্রন্থগুলোতে তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি কীভাবে তারা ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে উঠেছেন তার বর্ণনা রয়েছে; রয়েছে তাদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনে তাদের পিতামাতা ও শিক্ষকদের অবদানের কথাও। এ বিষয়ে অসাধারণ একটি গ্রন্থ হলো ইমাম আবু হামিদ আল গাজালীর (মৃত্যু ১১১১) ‘আল মুনকিয মিনাল দালাল’ শীর্ষক আত্মজীবনী। সেখানে তিনি তাঁর সংশয়বাদী সময়ের ঘটনা উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাত লাভের জন্য তিনি কীভাবে সংগ্রাম করেছেন সেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন। পরিশেষে তিনি এ কথা বলে উপসংহার টেনেছেন, ‘জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে এবং চিরন্তন সুখের পথে চলার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির মাধ্যমে তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিকের মধ্যে সমন্বয় সাধন।’ প্রাথমিকভাবে ঈমানের পথে যাত্রার সূচনা হয় শৈশবে পিতামাতা থেকে দীক্ষা লাভের মাধ্যমে। তারপর একটা সময়ে মানুষ বয়স ও জ্ঞানের দিক থেকে পরিপক্বতা অর্জন করে। তখন সে তার মনের মধ্যে ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে উঁকি দিতে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে। এদের অনেকে ভালো শিক্ষকের সন্ধান পায়, যারা তাদেরকে ভ্রান্ত পথে যেতে বাধা দেন এবং ঈমানকে মজবুত করতে সাহায্য করেন। এরাই শেষপর্যন্ত সফল হতে পারে। মির্জা ইয়াওয়ার বেইগও তার জীবনে নিজেকে ভ্রান্তি থেকে মুক্ত করে সঠিক পথে আসার যে পথপরিক্রমা—তা এই বইটিতে বর্ণনা করেছেন। এটা নিছক গল্প-কাহিনির কোনো বই নয়। এই বইটি থেকে পাঠকবৃন্দ শিখতে পারবেন, ঈমানের পথে চলতে গিয়ে মানুষ যেসব ফাঁদে পড়তে পারে সেগুলোকে কীভাবে এড়িয়ে চলা সম্ভব।