‘হ্যা মশাই, সিপাহী বিদ্রোহের সময় আপনার বয়স কত ছিল?’ মির্জা দিলদার শাহ বলেন, ‘এই চৌদ্দ-পনেরো বছর। সমস্ত ঘটনাই আমার ভালো করে মনে আছে। আব্বাজান আমাকে নিয়ে গাজীয়াবাদ যাচ্ছিলেন। হিগুন নদীর ওপর সৈন্যরা আমাদের ধরে ফেলল। মা ও আমার ছোট বোন চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। বাবা তাদের থামালেন ও চোখ বাঁচিয়ে একজন সেপাইয়ের তলোয়ার উঠিয়ে নিলেন। তলোয়ার হাতে নিতেই চারদিক থেকে সেপাইরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু-চারজনকে তিনি ঘায়েল করলেন কিন্তু সঙ্গীন ও তলোয়ারের আঘাতে তিনি খন্ড খন্ড হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শহীদ হলেন।যে সময় আমাকে মার কাছ থেকে আলাদা করা হলো তাঁর চিৎকারে আকাশ দুলে উঠল। বুকে হাত দিয়ে চিৎকর করে তিনি বলেছিলেন. ‘ওরে আমার মানিককে ছেড়ে দে তোরা । আমার স্বামীকে তো তোরা মেরেই ফেললি। এবার এতিমের ওপর একটু দয়া কর। আমার বৈধব্য আমি কার ভরসায় কাটাব? আল্লাহ আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার বুকের ধন যায় কোথায়? কেউ গিয়ে আকবর ও শাহজাহানকে কবর থেকে ডেকে আনুক এবং তাঁদের বংশের দুখিনীর দুর্গতির কথা শোনাক। দেখে যাও! আমার কলিজার টুকরোকে ওরা মুঠোয় পিষে ফেলছে। ওরে তোরা কেউ আয়। আমার কোলের বাছা আমায় দিয়ে দে।’
আমার ছোট বোন ভাইজান বলে আমার দিকে ছুটে আসে। কিন্তু সেপাইরা ঘোড়ায় চড়ে রওনা হয়ে যায়। আমাকে ঘোড়ায় রশি দিয়ে বাঁধে। ঘোড়া ছোটে, আমিও ছুটি। পা রক্তাক্ত, বুক ধড়ফড় করছে আর দম আটকে আসছে।