হে হাজিগণ! আল্লাহর দরবারে আপনাদের এ হাজিরা মোবারক হোক, মহিমাময় হোক। আপনাদের ইহজীবনের মহামূল্যবান মুহূর্তগুলো শুরু হতে যাচ্ছে। আপনাদের হজ¦ কবুলিয়াত অর্জন করুক। আপনারা জীবনের যাবতীয় গোনাহ হতে মুক্ত হয়ে আসুন। পুতপবিত্র নিষ্কুললুষ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুন এমনভাবে, যেন সদ্যপ্রসূত নবজাতক। হে ইবরাহীমী সুন্নাতের অনুসারীবৃন্দ! মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার রীতিনীতি জেনে নিন। আপনার হজে¦র সেই মানাসিক ও আদব-কায়দার অনুসরণ করবেন না কেন, যা শিখিয়ে গেছেন পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)? তার থেকে উত্তম আর কোনো রীতি হতে পারে কি? সামনের পাতাগুলোতে তারই (সা) পদচিহ্নগুলো আলোতে আলোকিত করবার প্রয়াস চালানো হয়েছে। সুতরাং এই চিরনন্দিত আদব-কায়দাকে নিজেদের হজে¦র সৌন্দর্যে পরিণত করুন। হে কাবার হেরেমের চারপাশে তওয়াফকারীগণ! হজ¦ করার সময়, মিনাতে থাকার সময়, ময়দানে আরাফাতে দাঁড়িয়ে, কুরবানী করতে গিয়ে, মাথা মুÐন করার সময়, সাফা-মারওয়াতে সায়ী করার সময়, মুযদালিফা অতিক্রম করার সময়, শয়তানকে কংকর মারার সময়, প্রতিক্ষণে প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের জীবনের আত্মপর্যালোচনা করতে থেকো। চিন্তা করো, হযরত ইবরাহীম (আ) এসব কাজ কেন করেছিলেন! এসব কাজের এত গুরুত্ব কেন? তার চলে যাবার পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগতকালে তার মিল্লাতের লোকেরা এসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাবে কেন? এই কাজগুলোকে আল্লাহ তায়ালা এত পছন্দ করে নিলেন কেন? হযরত ইবরাহীম (আ)-এর জীবনে লক্ষ্য কী ছিল? তিনি তার রবকে কীভাবে রাজি ও সন্তুষ্ট করে নিয়েছিলেন? হজে¦র বরকতে, হজে¦র রহমতে এবং এর প্রভাবে তোমার জীবনে বিপ্লবের বান আসা উচিত। ফিরে এসে নিজ জীবনের তামাম মোয়ামেলাত, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, চারিত্রিক, রাজনৈতিক বিষয় এমনভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলো, যেন পদে পদে অনুভূত হয় তোমার এই জীবনের কেন্দ্র এবং চালিকাশক্তি ঐ কাবা ঘর। হে সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়ে-হেঁটে চলাচলকারীগণ! হজে¦র দিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেন। তাহলে এই দ্বীন এবং তাঁর অনুসারীরা আজ কেন নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে? তাহলে কেন এই দ্বীনকে পশ্চাদপসরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে? কংকর নিক্ষেপ করার সময় মরদুদ শয়তানকে নিজেদের জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করো। কুরবানী করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে নিজেকে প্রতিটি কুরবানীর জন্য তৈরি করে নিও। তাওয়াফ করার সময় হারাম শরীফকে নিজ জীবনের কেন্দ্র ও নিয়ন্ত্রণকারী বানিয়ে নাও। আরাফাতের মাঠে দাঁড়ানোর সময় আদালতে আখেরাতে তোমার জবাবদিহিতার অনুভূতিকে তরতাজা সজীব করে নাও। মুযদালিফা অতিক্রম করার সময় আল্লাহ তায়ালার নাফরমানির প্রতিফল সম্পর্কে চিন্তা করে নাও। মিনাতে থাকার সময় আল্লাহর মহানত্বকে নিজের অন্তরে গেঁথে নাও। ইহরাম বাঁধার সময় মনে করো, শেষ পর্যন্ত এই সবকিছু ছেড়েছুড়ে ফেলে চলে যেতে হবে একদিন। আবার ইহরাম এই জন্য খুলে দিও যে, এবার দুনিয়াতে ফিরে গিয়ে এই পৃথিবীতেই বসবাস করে পরকালকে প্রাধান্য দিতে হবে। হে বাবে মুলতাযেমে আল্লাহকে আহŸানকারীগণ! নিজের দোয়াতে সকলকে মনে রেখো। নিজের মাতা-পিতা, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি, নিজ গ্রামবাসী ও শহরবাসী, বন্ধু-বান্ধব তথা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা; আর যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে পরপারে, তাদের কথাও মনে রেখো। নিজ দেশ ও জাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও সংহতির জন্য দোয়া করো। আল্লাহর দ্বীনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দোয়া করো; সেই মুজাহেদীনদের জন্য অনেক অনেক করে দোয়া করো, যারা জান বাজি রেখে অকুতভয়ে লড়ে যাচ্ছে রণাঙ্গনে। অতঃপর নিজেদের মুনাজাতে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাথে সত্যিকার ইশ্ক পোষণকারী এবং তার প্রদর্শিত সুন্নাতসমূহের প্রতি অগ্রসর হয়ে প্রতিপালনকারী আল্লাহর বান্দা খুররম মুরাদ (রহ)-এর কথা মনে রেখো। তিনি তার জীবনের শেষ সফরে রওয়ানা দেওয়ার আগে খুব কষ্ট করে একটি বই আকারে উপহারের এই ডালি সকলের জন্য তৈরি করে গেছেন। এই মহব্বত ভরা উপহারের শোকরিয়া আপনারা কীভাবে আদায় করবেন? আপনারা খুররম মুরাদ (রহ)-এর জন্য দোয়া করবেন এবং সেই সব লোকদের জন্যও দোয়া করবেন, যাদের প্রচেষ্টার বদৌলতে আজ এই তোহফা আপনাদের হাতে পৌঁছেছে। ইন-শা-আল্লাহ! এই ছোট্ট পুস্তিকা পাঠ করে আপনারা যখন হজ¦ করবেন, তখন আপনারা অনুভব করবেন, রাসূলুল্লাহ (সা) পদে পদে এবং প্রত্যেক ব্যাপারে আপনাদের সফর সঙ্গী!