মানবিক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নৈতিকতার বিশেষণে ভূষিত ও উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত মানুষকেই আদর্শ মানুষ বলা যায়। এই আদর্শ মানুষই সমাজের মূলভিত্তি। এদের দ্বারাই সমাজ সুন্দরভাবে চলে। মানবতা হয় উপকৃত । জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে সে নিবেদিত হয়। এসব গুণে কোন পুরুষ গুণান্বিত হলে তাকেই আদর্শ পুরুষ বলে। আদর্শ সন্তানের জন্য যেমন আদর্শ মায়ের দরকার, আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য যেমন আদর্শ নারী-পুরুষ দরকার; তেমনি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকে পুরুষরাই। দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ যেমন পুরুষদেরকেই নবুওয়াত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তেমনি তিনি পুরুষদেরকেই কর্তৃত্বশীল করেছেন। তাই দেশ-জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পুরুষদেরকে আদর্শ হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে তাদের দ্বারা ব্যক্তি-ব্যষ্টি, সমাজ-রাষ্ট্র সবাই কল্যাণ লাভ করবে, সবাই সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
পৃথিবীর সূচনা কাল হতেই অদ্যাবধি বহু পুরুষ মানুষ অতিবাহিত হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তাদের মধ্যে অনেকে ছিল বিভিন্ন ধর্ম, মতবাদ, আদর্শ ও বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত । ইসলামের আলােকে তাদের অনেকেই আদর্শ পুরুষ নয়। বরং আদর্শ পুরুষ হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ভাষায় আদর্শ। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে পুরুষ বাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়। যে, এ জগৎসংসারে পুরুষই প্রধান। পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানে, নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা যেমন পুরুষের, তেমনি অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে, অরাজকতা ও দুর্নীতি প্রসারে, সকল প্রকার দুর্ঘটনা ঘটাতে পুরুষের ভূমিকাই অত্যধিক। পরিবারের প্রধান হিসাবে পুরুষ যদি ভাল হয়, তাহলে পরিবার ভাল চলে, পরিবারের সদস্যরাও ভাল হয়। অন্যথা পরিবার ও পরিবারের সদস্যরা ঠিক পথে চলে না। সংসারে লেগে থাকে অশান্তি, কলহ-বিবাদ।
আল্লাহ পৃথিবীতে নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। কিন্তু নারীপুরুষের সৃষ্টি কৌশলে তারতম্য রয়েছে। এজন্য যে, তারা যেন একে অপরের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। শক্তি-সামর্থ্য পুরুষের বেশী, বুদ্ধিমত্তায়ও পুরুষ অগ্রগামী। তাই পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়া ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য পুরুষকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। পুরুষ সে দায়িত্ব পালন না করলে কিংবা সে দায়িত্ব অন্য কেউ হরণ করলে, পৃথিবীতে শান্তি আসতে পারে না। বজায় থাকতে পারে না স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা। দূরীভূত হতে পারে না অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পুরুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শে আদর্শবান হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে পৃথিবীর যাবতীয় অশান্তি, অরাজকতা দূরীভূত হবে। ফিরে আসবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা। পথিবীর সর্বত্র সম্ভব না হলেও অন্ততঃ মুসলিম দেশের মুসলিম নাগরিকদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শে তথা ইসলামের আদর্শে আদর্শিত হয়ে তাদের হারানাে কর্তৃত্বকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে তাদের নিজের জীবনে এবং দেশ ও জাতির মধ্যে ফিরে আসবে শান্তি। সাথে সাথে নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস ও আমলকে ঢেলে সাজাতে হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ তথা অহির আলােকে। বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতি ও আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ নয়; বরং ইসলামের বিধানকে মেনে নিয়ে জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কাজ করতে পারলে ইহকাল ও পরকাল সুন্দর ও সুখময় হবে।
ভূমিকা আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য, পরহেযগার ব্যক্তি আদর্শ পুরুষ, তাক্বওয়া জান্নাত লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম, আল্লাহভীতি যার, মানুষের অন্তর পরহেযগারিতার স্থান, তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরতা, জিহ্বার সংযমতায় আদর্শ হওয়া যায়, সালাম প্রদানকারী, সালামের পদ্ধতি, উত্তম চরিত্রের অধিকারী, বিনয় ও নম্রতা অবলম্বনকারী, লজ্জাশীলতা, অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকা, অহংকার হতে বেঁচে থাকা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী, প্রতিবেশীর হক আদায়কারী, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী, স্ত্রীর সাথে সদাচরণকারী, আমানত রক্ষাকারী, সৎকাজের আদেশকারী ও অন্যায় হতে নিষেধকারী, কৃপণতা পরিহারকারী, মেহমানের সমাদরকারী, হালাল রুযী উপার্জনকারী