‘আধুনিকতা’ হলো ঐতিহ্যের বিপরীত প্রত্যয়। ঐতিহ্য বলতে বোঝায় মানুষ, মহাবিশ্ব এবং খোদার ত্রিত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত চেতনা-ব্যবস্থা এবং অস্তিত্ব-বিধানকে। ঐতিহ্যের ধারকগণ এই তিনটি বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়-আশয়কে মূল্যায়ন করেন। একজন ঐতিহ্যবাদী হলেন যিনি তার ছোট বড় সমস্যাবলীকে খোদা, মানুষ এবং মহাবিশ্বের সমন্বিত পটভূমিতে দেখেন এবং নিজের ব্যক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক সিদ্ধান্তে খোদার আদেশকে বিবেচনায় রাখেন। ঐতিহ্যের প্রিন্সিপাল পার্সপেক্টিভ হলো খোদা। সেই পার্সপেক্টিভ থেকে খোদাকে খারিজ করে দেওয়ার নাম আধুনিকতা। ঈশ্বরকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও সম্পর্কহীন করে দেওয়াই আধুনিকতা’র প্রধান মনোভাব।
মহাবিশ্ব, খোদা এবং মানুষের ত্রিত্ব থেকে খোদাকে অপসারণের কসরৎ আমাদের এখানেও জারি আছে। এহেন পরিস্থিতিতে ‘আধুনিকতা’র প্রভাব আমাদের ওপর কীভাবে এবং কতভাবে পড়ছে, আমাদের জন্য তা খতিয়ে দেখার জরুরত আছে। বক্ষমান গ্রন্থে তারই সর্বোত্তম খতিয়ান হাজির করেছেন প্রফেসর হাসান আসকারি।
পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দ্বন্দ্ব-প্রশ্নে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে যারা শরিক হয়েছেন, তাঁদের মাঝে হাসান আসকারির নাম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রগতিশীল সাহিত্য থেকে ঐতিহ্যবাদী চিন্তার দিকে আসকারির যে সফর, তার রয়েছে অসংখ্য গন্তব্য এবং প্রতিটি গন্তব্য হয়ে ওঠে এক নতুন যাত্রা ও নতুন চিন্তার শিরোনাম। সাহিত্যের জগৎ থেকে ধর্মের দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে তিনি রচনা করেন কতিপয় গ্রন্থ। তন্মধ্যে, সবচে’ আলোচিত গ্রন্থটি হলো ‘আধুনিকতা’। বইটি তার শৈলীর দিক থেকে খুবই সহজ এবং অনুসরণীয় একটি বই। … বইয়ের দ্বিতীয়াংশে লেখক পাশ্চাত্য চিন্তা-দর্শনের প্রায় দুই’শ বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, এগুলো দূর করা ব্যতিরেকে ইংরেজি শিক্ষিতদের কাছে দ্বীনের বিষয়াবলী বোধগম্য করানো সম্ভব হবে না।