এটা খুবই স্বাভাবিক যে, যে ব্যক্তি কোনাে আইন বা বিধানের অধীনতা স্বীকার করে, সে ইচ্ছামত স্বাধীনভাবে চলতে পারে না । তাকে উক্ত আইন বা বিধানের নিয়ন্ত্রণ মেনেই চলতে হয়। হাদীছ শরীফে মুসলিমকে ঐ ঘােড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার নাকের রশি একটি খুঁটির সাথে বাঁধা রয়েছে। এ রশি তাকে যতদূর যাওয়ার সুযােগ দেয় এর বাইরে যেতে পারে না। অন্য একটি হাদীছে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ কতগুলাে কাজকে ফরজ করে দিয়েছেন, সেগুলােকে তােমরা নষ্ট করে ফেল না । তিনি কতগুলাে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তােমরা সে সীমা লংঘন করাে না। কিছু জিনিষকে তিনি হারাম করেছেন, তােমরা সেগুলাের বিরােধিতা করাে না। ভুলে গিয়ে নয়, বরং তােমাদের প্রতি অনুগ্রহ বশত: অনেক বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, সে বিষয়ে তােমরা বিতর্কে লিপ্ত হয়াে না।” অন্য একটি হাদীছে বলা হয়েছে, “দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার তুল্য।” অর্থাৎ কারাবাসী যেমন কারাগারে স্বাধীনভাবে চলতে পারে না বরং কারাগারের নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ পূর্ণভাবে মেনে চলতে হয়। অনুরূপভাবে যারা ঈমান এনে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয় তরাও স্বাধীনভাবে চলতে পারে না বরং যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকবে ততদিন তাকে ইসলামের সকল নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ মেনেই চলতে হবে। একজন মুমিনকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ মেনে চলায় অভ্যস্ত করতে ইসলাম নানামুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ইসলামের আনুষ্ঠানিক ইবাদতসমূহ এ প্রশিক্ষণেরই বিভিন্ন কোর্স। নামায, রােযা, হজ্জ ও যাকাতসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ মূলত: ইসলামের আলােকে জীবন যাপনের জন্য যে যােগ্যতা ও নৈতিক শক্তির প্রয়ােজন তারই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে রােযার ভূমিকা কি, এ বইয়ে আমরা তার সংক্ষিপ্ত আলােচনা পেশ করবাে ।
আহকাম সংক্রান্ত বিষয়াবলীতে ইমামগণের মতভেদের কারণে সঠিক বিষয় নির্ণয় করা খুবই দুরুহ। আর এ মতভেদের কারণেই সাধারণ লােকদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি এবং দলাদলির সৃষ্টি হয়ে থাকে। যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য মারাত্মক একটি অন্তরায়। এ গ্রন্থে আমি বিভিন্ন মতামতকে সমন্বয় সাধনের প্রানান্তকর চেষ্টা করেছি। যেখানে সমন্বয় সাধন কোনাে ক্রমেই সম্ভব হয়নি, সেখানে কুরআন, হাদীছ ও যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে সঠিক মতে উপণীত হওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তবে প্রতিটি বিষয়েই ইমামগণের মতামত উল্লেখ করেছি এবং তাদের মতের স্বপক্ষের দলিলগুলােও সংযােজিত করেছি। অতঃপর যে মতটিকে সঠিক পেয়েছি, সেটিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি এবং অগ্রাধিকারের পক্ষে দলিলও পেশ করেছি।
এ গ্রন্থে আমি প্রতিটি মাস'আলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মূল হাদীছগুলােও উল্লেখ করেছি। যাতে পাঠকবৃন্দ প্রতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাদীছ সম্পর্কেও সম্যক ধারণা লাভ করতে পারেন। প্রতিটি বিষয় লেখার সময়ই আমি উল্লেখিত বিষয়ে ভুল বুঝাবুঝি দূর করা, মতভেদ কমিয়ে আনা এবং ঐক্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধির দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রেখেছি। আশা করি, পাঠকবৃন্দ সে দৃষ্টিকোণ থেকেই এ গ্রন্থটিকে উদারভাবে গ্রহণ করবেন।
আমার মতের সঙ্গে দ্বিমত পােষণ করার এখতিয়ার প্রত্যেকেরই রয়েছে। তবে কোনাে বিষয়ে কারাে কোনাে পরামর্শ থাকলে তা লিখে জানালে এবং কুরআন হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার নিকট তা সঠিক বিবেচিত হলে, পরবর্তী সংস্করণে সংযােজন করে দেব ইনশাআল্লাহ।