খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা)। সারা বিশ্বের অনন্য ও শ্রেষ্ঠতম সমরবিদ। বীরত্ব, ঈমানী দৃঢ়তা, সুনিপূণ রণকৌশল, সামরিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতা তাঁকে বিশ্বের সুউচ্চ সেনানায়কের আসনে সমাসীন করেছে। তাঁর রণকৌশলের কারণেই ওহুদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভের পর পরাজয়বরণ করেছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি বহু সেনাবাহিনীর সেনাপতিত্ব করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সুদীর্ঘ সামরিক জীবনে তিনি কখনাে পরাজয় বরণ করেননি। মুতার যুদ্ধে বিশাল রােমক বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র একটি মুসলিম বাহিনী যখন প্রায় পরাজিত হচ্ছিল, সে সময় তিনি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন কৌশলে সেনাবাহিনীকে পুনবিন্যাস করে এবং বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে মুসলিম বাহিনীকে পরাজয়ের গ্লানি থেকে রক্ষা করেছিলেন। এ যুদ্ধে তিনি নয়টি তলােয়ার ভেঙ্গে শত্রু-বাহিনীকে বিতাড়িত করে মুসলিম বাহিনীকে নিরাপদে মাদীনায় প্রত্যাবর্তন করিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে সাইফুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর তলােয়ার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি মহানবী (সা), আবু বাকর ও উমার (রা)-এর সময় সেনাপতি হিসেবে বহু অভিযান সফলতার সাথে পরিচালনা করেন। এ শ্রেষ্ঠ সেনানায়কের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, অভিযানসমূহ ও সমরকৌশল নিয়ে ‘The Sword of Allah' নামে এ গ্রন্থটি রচনা করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের তদানিন্তন প্রধান প্রশিক্ষক লে: জেনারেল এ আই আকরাম। তিনি বইটি লেখার পূর্বে খালিদ (রা) পরিচালিত অভিযানের স্থানগুলাে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। লেখকের দীর্ঘ সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতা, মূল আরবি ইতিহাস গ্রন্থ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং খালিদ (রা) এর যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলাে সরেজমিনে পরিদর্শন গ্রন্থটিকে অধিকতর সমৃদ্ধ করেছে। বইটিতে ইসলামের সােনালী যুগের সামরিক ও ইসলামের বিজয়ের ইতিহাস আলােচিত হয়েছে। লেখক বইটিতে খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা) এর সামরিক নেতৃত্বের গুণাবলী, সামিরক কৌশল প্রয়ােগের দক্ষতা ও তার পরিচালিত যুদ্ধসমূহের নিখুঁত চিত্র অংকন করেছেন। “দি সাের্ড অব আল্লাহ" গ্রন্থটি ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন কর্নেল (অ.) মুহাম্মদ আব্দুল বাতেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে ১৯৮৫ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীতে অবজারভার হিসেবে এবং অবসরের পূর্বে শহীদ বীর উত্তম লে, আনােয়ার গার্লস কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অনুবাদ অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল হয়েছে। ফলে পাঠকদের কাছে তা অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটির প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার এটি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আশা করি পাঠকমহলে বইটি সমাদৃত হবে।