গ্রন্থটি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সীরাত গ্রন্থ “আর রাহীকুল মাকতুম” প্রণেতা আল্লামা সফীউর রহমান মােবারকপুরী সাহেব-এর অভিমতঃ
ইসলামের দাওয়াত যখন আরম্ভ হয়, তখন এ দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাসীদের সামনে শুধুমাত্র একটি পথই খােলা ছিল যে, এ পথের আহ্বায়ক মােহাম্মদ (স)। থেকে যে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয় তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা। আর তিনি যা করতে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকা। এ দাওয়াত যখন সামনে অগ্রসর হতে থাকে তখন এ মূলনীতিটি বারবার নানাভাবে লােকদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে “হে ঈমানদারগণ! তােমরা আল্লাহ্র অনুসরণ কর আর তাঁর রাসূলের অনুসরণ কর। তােমরা তােমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট কর না।” (সূরা মুহাম্মদ-৩৩)
এ মূলনীতির ওপর যতদিন পর্যন্ত উম্মত অটল ছিল; ততদিন কল্যাণ ও মুক্তি তাদের পদলেহন করেছে। কিন্তু যখনই মানুষের মধ্যে সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন দার্শনিকদের নানা দল তৈরি হয়েছে (যেমন ইসলামের বিষফুড়া হিসেবে সুফী মতবাদ, পীরবাদ, মরমীবাদ ইত্যাদি নানান মতবাদ ইসলামে অনুপ্রবেশ করে এর সঠিক দিকনির্দেশনায় এক জগাখিচুরীর সৃষ্টি করে মানুষের চিন্তাচেতনাকে দিকভ্রান্ত করে তুলেছে। পরিণামে উম্মতে মুহাম্মদী অনেক ক্ষেত্রেই সহজ সরল পথ পরিত্যাগ করে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে।) আর সেসব নব উদ্ভাবিত নির্দেশকরা যারা আকীদা, বিধি-বিধান, মূলনীতি ও শাখানীতিকে তাদের নিজস্ব দর্শনের নিক্তিতে মেপে, উম্মতের মাঝে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আরম্ভ করেছে তখনই এর ফলাফল হচ্ছে, উম্মতগণের পশ্চাদমুখিতা। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে ইমাম মালেক (র)-এর অতি উপযুক্ত সমাধান দিয়েছেন এ বলে ?
“পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে মতাবলম্বনে বিশুদ্ধ হয়েছিল, তা ব্যতীরেকে পরবর্তীগণ কখনাে পরিশুদ্ধ হতে সক্ষম নয়।” অর্থাৎ নিরকুশ কিতাব ও সুন্নাতের অনুসরণ। কিন্তু দুঃখজনক হল এটাই যে, উম্মতকে দর্শনের নব উদ্ভাবিত এ বিষবাষ্প আজও গ্রাস করে রেখেছে। এতে মুসলিম উম্মাহর মাঝে সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে নানান হানাহানি, সংঘাত ইত্যাদির মত বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিণামে প্রজন্ম নানাভাবে লক্ষ্যচ্যুত হয়ে ইসলামের মূল বিষয় থেকে ক্রমান্বয়েই দূরে সরে যাচ্ছে। কিং সউদ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী একজন উঁচুমানের ইসলামী চিন্তাবিদ। গােড়া থেকেই তিনি দ্বীনি সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে এর ছায়াতলে অবস্থান করেছেন। আর এতে করে তাঁর মধ্যে এ চিন্তার উদ্রেক হয়েছে যে, উম্মতের সংশােধনের মূল হাতিয়ারই হচ্ছে একচেটিয়া কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার বিস্তার ঘটানাে। আর তা এজন্য যে, উম্মতগণ যেন বিভিন্নমুখী দর্শন চিন্তা-চেতনায় জড়িয়ে না পড়ে। আর তিনি এ কাজে আঞ্জাম দিতে গিয়ে সে পদ্ধতিই অবলম্বন করেছেন।
প্রথমদিকে তিনি সাধারণ পাঠকের নিত্যদিনের প্রয়ােজনীয় বিষয়সমূহের সাথে সম্পৃক্ত মাসয়ালা-মাসায়েলগুলাে শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস থেকে সংগ্রহ ও সাজাতে আরম্ভ করেছিলেন। তা দেখতে দেখতে একদিন গ্রন্থে রূপ নেয়। যা যুবক ও হিদায়াতকামীদের জন্য একটি পরিপূর্ণ দ্বীনিকোর্স বলা যেতে পারে। পরবর্তীতে লেখক মাসয়ালা-মাসায়েল ও বিধি-বিধানের পর্যালােচনায় এর সমাধানকল্পে যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন নিঃসন্দেহে এটি একক পদ্ধতি- যাতে কোন মভেদের সুযােগ নেই এবং তা নির্ভুল পদ্ধতি। হয়তবা কোন কোন মাসয়ালা-মাসায়েলের বিশ্লেষণে বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে থেকে তার দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি বর্ণনার ওপরই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তার পদ্ধতি যে নির্ভুল ও সংশয়মুক্ত এতে কোনাে সন্দেহ নেই। ফলে তাঁর প্রকাশিত কিতাবসমূহ থেকে মােটামুটি পূর্ণ আত্মতৃপ্তি নিয়ে উপকৃত হওয়া সক্ষম এবং এর ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল হওয়া যেতে পারে।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে মাওলানা ইকবাল কীলানীর লেখাসমূহ জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত, জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব, কবরের ভয়াবহ ইত্যাদি কিতাব থেকে বিশাল জনেগােষ্ঠি হিদায়াতের সন্ধান পেয়েছেন, আর তারা সুন্নাতে রাসূলের বর্ণনাময় এসব কিতাবসমূহ পেয়ে সীমাহীন আনন্দিতও হয়েছেন। আল্লাহ্ তাঁদের এ আনন্দকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আর সে সাথে লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক, পাঠক ও এর সাথে যারা সংশিষ্ট রয়েছেন তাদেরও উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।