চারদিকে তখন জাহেলিয়াতের নিকষ আঁধার। যেন এক বিভীষিকাময় অন্ধকারের অভয়ারণ্য গোটা মক্কা নগরী। মানুষে মানুষে হানাহানি, খুনোখুনি; জীবন্ত দাফনরত কন্যা শিশুর অবুঝ কান্নায় আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত। চারদিকে ধারালো অস্ত্রের ঝনঝনানি। রক্তের নেশায় মত্ত এক ভয়াল জাতি যখন ধ্বংসের অতল গহিনে তলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আলোকমশাল হাতে সামনে এসে দাঁড়ালেন রাহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)।তিনি এলেন বসন্তের সমীরণের মতো।
বিরান মরুর বুকে সুপেয় ঝরনাধারার মতো স্বপ্ন ও শান্তির বারতা নিয়ে। একদিন একাকী সন্তর্পণে হেরা গুহা থেকে নেমে এলেন মক্কার রাজপথে। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন দয়াময় রবের একত্ববাদ। স্বার্থে আঘাত পড়ায় তুমুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো পৌত্তলিক মহলে। কাফির-মুশরিকরা একজোট হলো, দ্বীনের আলো নিভিয়ে দেওয়ার স্পর্ধা নিয়ে পথ আগলে দাঁড়াল রাসূলের সামনে। অগাধ বিশ্বাস ও সীমাহীন ভালোবাসার নজরানা পেশ করে রাসূলের পাশে এসে দাঁড়ালেন আবু বকর, উমর, হামজা (রা.)-এর মতো সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। জুলুম, নির্যাতনের শ্বাপদসংকুল পথ পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকল শান্তির পতাকাবাহী এই কাফেলা, প্রদীপ্ত আলোর মিছিল।
অগ্রভাগে থাকলেন কুল কায়েনাতের নবি, বিশ্বজাহানের অবিসংবাদিত নেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। মক্কার দুর্গম পথ পেরিয়ে মিছিল এসে দাঁড়াল মদিনায়। শুরু হলো ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। নির্মিত হলো ঈমান, ইহসান ও ইনসাফের মূর্তপ্রতীক, দুর্দণ্ড প্রতাপশালী এক সভ্যতা।