খোলাফায়ে রাশেদীন ( জীবন ও কর্ম) ◾️হযরত•উসমান•ইবনে•আফফান•(রা:)◾️।মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফা।তার উপাধি ছিল ‘জিন্নুরাইন’ (দুই আলোর অধিকারী)।কারন তিনিই একমাত্র সাহাবী যার নিকট রাসূল (স:) তার দুই কন্যাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। লজ্জাশীলতা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।রাসূল (স:) বলেন,আমার উসমান এতই লজ্জাশীল তাকে দেখে আসমানের ফেরেশতারাও লজ্জা পায়। •উসমান (রা.) ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। ঘন দাড়ি, কান পর্যন্ত ঝোলানো যুলফী,মেহেদী রঙের দাড়ি এবং স্বর্ণখচিত দাঁত।অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন।তিনি ছিলেন মক্কার উমাইয়া গোত্রের অন্যতম ধনী ব্যক্তি।এজন্য তার উপাধি ছিল ’গনী’।তিনি আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) অন্তর্ভুক্ত। •তিনি ইসলামের জন্য বহু সম্পদ ওয়াকফ করে দেন।তাবুকের যুদ্ধে যখন প্রচুর রসদ প্রয়োজন ছিল তখন তিনি ৯৫০টি উট ও ৫০ টি ঘোড়া দান করেন।আবু বকর (রা:) শাসনামলে মদিনায় যখন দুর্বিক্ষ দেখা দিল। সিরিয়ায় ব্যবসা মাধ্যমে আয়কৃত এক হাজার উট বোঝাই পণ্য সামগ্রী মদিনাবাসীকে দিয়ে দিলেন ।মদিনার মুহাজিরদের পানির সমস্যা দূর করতে জনৈক ইহুদীর কাছ থেকে ১৮০০০ দিরহামে রুমা কূপ ক্রয় করে ওয়াকফ করে দেন। •৬৪৪ সালের ৬ নভেম্বর তিনি খলিফা নির্বাচিত হন।পরবর্তী বার বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন।তিনি বায়তুল মাল থেকে জনগণকে দেওয়া ভাতা ২৫% বাড়িয়ে দেন যা ওমর (রা:) এর সময় সবার জন্য নিদির্ষ্ট ছিল। বিজিত অঞ্চলের কৃষি জমি বিক্রির উপর ওমর (রা:) নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তিনি এর অনুমোদন প্রদান করেন। •অর্থনৈতিক পুনঃগঠনের কারণে মুসলিম অমুসলিম সবাই অর্থনৈতিক সুফল ভোগ করতে পারতো।তিনিই প্রথম খলিফা যিনি মসজিদুল হারামের চারিদিক বিস্তৃত করেন।তিনি পুলিশ বাহিনীর ব্যবস্থা চালু করেন।পূ্র্বে রাষ্ট্রপক্ষের লোক যাকাত আদায় করত।তিনি এপদ্ধতি পরিবর্তন করেন।পরবর্তী সময় থেকে নিজে হিসাব করে নিজের যাকাত বায়তুল মালে প্রদান করত। •তৎকালীন সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া (রা:) নৌবাহিনী গড়ে তোলেন ।সেই বাহিনীতে মুসলিম ছাড়াও মিসরীয় ও সিরীয় খ্রিস্টানরা যোগদান করেন। এই ব্যতিক্রম নৌবাহিনী ৬৫৫ সালে রোমান বাইজান্টিন নৌবাহিনীকে ভূমধ্যসাগরে পরাস্ত করে। আর বাইজান্টিন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।ইবনে সা’দ (রা:) এর নেতৃত্বে উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেনের অনেক অংশ বিজিত হয়। •কুরআন নাজিল হয়েছিল সাতটি আহরুফে (উপভাষা)।কিন্তু প্রধান কপি লিখিত ছিল কুরাইশ আহরুফে।বুঝার সুবিধার্থে অনেক বিজ্ঞ সাহাবী তাদের কোরআনের কপির সাথে কিছু সাংকেতিক লিখা লিখে রাখত।নতুন মুসলমানরা যখন কোরআন লিখিয়ে নিত তখন অনেকে এই লেখাগুলোকেও আয়াত মনে করত।ফলে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়। •এই সমস্যা নিরসনের জন্য তিনি এক অভিনব পদক্ষেপ গ্রহন করেন।যত লিখিত কপি আছে সেগুলো শরিয়ত মোতাবেক রহিত করেন এবং পুরো বিশ্ব জুড়ে এক ও অভিন্ন কুরাইশি আহরুফের কুরআন প্রচলিত করেন। সেই কপিটির অনেকগুলো অনুলিপি করিয়ে সকল প্রদেশে একটি করে পাঠিয়ে দেন। যার যার দরকার হবে সেই অনুলিপি থেকে যেন লিখিয়ে নেয়। •তার শাসনামলের শেষ দিকে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করে।হজ্জের সময় প্রায় এক হাজার মিসরীয় বিদ্রোহী মদিনায় জড়ো হয় উসমান (রা:) কে খেলাফত থেকে সরানোর লক্ষ্যে।তারা হযরত আলী সহ বড় বড় সাহাবীদের খলিফা হওয়ার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু সকলেই নাকচ করে দেয়। •বিদ্রোহীরা উসমান (রা) কে গৃহবন্দী করলেন।উসমান (রা) এর অনুসারীরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ার অনুমতি চাইলো। কিন্তু তিনি অনুমতি দিলেন না আর বললেন,এক মুসলিম আরেক মুসলিমের রক্ত ঝরাতে পারে না।আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা) এবং আলী (রা) এর দুই পুত্র হাসান (রা) ও হুসাইন (রা) গেট বন্ধ করে পাহারা দিতে লাগলেন। •৬৫৬ সালের ১৭ জুন।বিদ্রোহীরা গেটের পাহারা দেখে ঘরের পিছন দিক থেকে ঢুকে উসমান (রা:) মাথায় আঘাত করল।তিনি কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন।অতর্কিত আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরন করেন।তার জানাজা পড়ালেন জাবির (রা)।জান্নাতুল বাকীর ‘হাশশে কাওকাব’ নামক অংশে তাঁকে দাফন করা হয়। মাগরিব ও এশার মাঝামাঝি সময়ে তাঁর দাফন কার্য সমাধা করা হয়। আমাদের জন্য খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনে রয়েছে হাজারো শিক্ষানীয় ঘটনা।