অরণ্য, বিচিত্র নর নারীর সমাবেশ আর অচেনা তবুও এক বাস্তব জগতের কাহিনি, এই সব মিলিয়েই ‘আরণ্যক’। উপন্যাসের কাহিনির মতো এখানেও অসংখ্য চরিত্রের সমাবেশ, তবু সব কিছু ছাপিয়ে অরণ্যই এর কেন্দ্রীয় চরিত্র। ‘আরণ্যক’ বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) চতুর্থ উপন্যাস। প্রবাসী পত্রিকায় কার্তিক ১৯৩৮ থেকে ফাল্গুন ১৯৩৯ পর্যন্ত উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৩৯ সালে 'কাত্যায়ণী বুক স্টল' থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়। অনেক সমালোচক বলেছেন, আরণ্যকে কোন সুসংবদ্ধ কাহিনি নেই। এটি একটি ভ্রমণ বৃত্তান্ত। এর উত্তরে বিভূতিভূষণ নিজেই বলেছেন, ‘ইহা ভ্রমণ বৃত্তান্ত বা ডায়েরী নহে - উপন্যাস।’ উপন্যাসটি লেখা উত্তম পুরুষে। কলকাতার এক যুবক সত্যচরণ। বেকার জীবনে এক বন্ধুর জমিদার বাবার জঙ্গল মহালে ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে যান। সেই অরণ্যে তিনি মুখোমুখি হন এক ভিন্ন পরিবেশের। ঘন অরণ্য। যেখানে সাধারণ মানুষের বসবাস অসম্ভব। সেখানেই জঙ্গল পরিষ্কার করে ফসল উৎপাদন আর খাজনা আদায় করাই তাঁর কাজ। সে কাজ তাঁর সংবেদনশীল হৃদয়কে নাড়া দেয় বারবার। একসময় কলকাতায় ফিরে এলেও সেই বিচিত্র অভিজ্ঞতা রয়ে যায় তাঁর মনের গভীরে। কলকাতায় ফিরে এই অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণই হলো ‘আরণ্যক’। এই আলোকে পুরো কাহিনিটি সত্যচরণের কর্মজীবনের সাথে সংশিষ্ট, তবে আসল সত্যটি হলো, সত্যচরণ নয়, এই কাহিনী লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতার ফসল। বিভূতিভূষণ পূর্ণিয়া জেলার ভাগলপুরে এক জঙ্গল মহলে চাকরি করতেন। সে চাকরির সুবাদে তিনি যা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন, উপলব্ধি করেছেন, সত্যচরণের স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সে কাহিনিরই নিঁখুত বর্ণনা দিয়েছেন। এতটাই নিখুঁত যে পাঠকের হৃদয় চলে যাবে সেই অদ্ভুত সুন্দর অরণ্যের মাঝে।