খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে গোবির তৃণহীন মরুভূমি থেকে আকাশ আঁধার করে আসা সর্বনাশা ঝড় প্রচণ্ড আক্রোশে আছড়ে পড়ে খাওয়ারিজমের ওপর এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে শক্তিমান ও সমৃদ্ধ এই সাম্রাজ্য। কিন্তু খাওয়ারিজমের করুণ অবস্থা দেখেও সতর্ক হওয়ার গরজ অনুভব করেনি পাশের বাগদাদ। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। মোঙ্গল ও তাতার নামক সেই প্রলয়ংকরী তাণ্ডবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিশাল আব্বাসি খিলাফত। মুসলিমবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ত্রাস, শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা। রক্তের স্রোতে তলিয়ে যেতে থাকে খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ। ফেলে দেওয়া গ্রন্থের কালিতে কালো হয়ে যায় দিজলা ও ফুরাত। জীবিতরা আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে থাকে মিসরের দিকে—মামলুক সুলতানের আশ্রয়ে।
মানুষ মনে করেই নিয়েছিল, তাতারঝড় একটা খোদায়ি গজব; কিয়ামতপূর্ব ইয়াজুজ-মাজুজের বাহিনী। কেউ কেউ ভাবছিল এরা দাজ্জালের বাহিনী; তাই মানুষের সাধ্য নেই এই ঝড়ের মোকাবিলার। মুসলিমবিশ্বের ওপর বয়ে যাওয়া এ তাণ্ডব দেখে সেদিন থরথর করে কাঁপছিল ইউরোপও। হ্যারল্ড ল্যাম্বের ভাষায়, ‘সুইডেন আর ভেনিসের জেলেরা তাতারদের ভয়ে সাগরে মাছ ধরার নৌকা ভাসাতে ভয় পেত!’
ইতিহাসকে তুলনা করা হয় আয়নার সঙ্গে। ইতিহাসের পাতায় দেখে নিতে হয় অতীতের উত্থানের কারণ, পতনের প্রধান নিয়ামক। জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অনুসরণ করতে হয় সেই উত্থানের মাধ্যমগুলোর এবং পরাজয় থেকে বাঁচতে হলে পরিহার করতে হয় পতনের কারণসমূহ। এমনই এক ইতিহাস হচ্ছে মোঙ্গল ও তাতারদের ইতিহাস আর মামলুকদের উত্থান।
মানবতার সেই ট্রাজেডি আর উত্থান নিয়ে বিশ্বখ্যাত গবেষক ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি লিখেছেন গ্রন্থটি।