এ কিতাবটি লিখার জন্য কোন ব্যক্তি আমার নিকট আবেদন করে নি। এমনকি আমার নিজের স্বভাবের মধ্যেও এর জন্য আহ্বানকারী পয়দা হয় নি বরং মূল ঘটনা এভাবে সামনে এসে হাজির হয়েছে যে, কিছু কিছু বিষয়ে শিক্ষাদান ও গ্রহণের সময় যেগুলােতে কথা লুকিয়ে রাখা এমনভাবেই সম্ভব ছিল না, যেমনভাবে নব বধূর সুগন্ধকে ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না। আলােচনা প্রাক্কালে চিন্তার রাজা বক পাখি এবং অভিশপ্ত ও মনহুস হায়েনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হল। এ প্রাণীগুলাের আলােচনা দ্বারা এমন কিছু দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা পয়দা হল, যেমন 'বাসুস' যুদ্ধে হয়েছে। সঠিক রায় দ্রুততার সাথে একত্রিত হতে লাগল। শকুন এবং মেছােরগের পার্থক্য মিটে যেতে লাগল। বিষধর সাপের মুখে বিষ্ণু পতিত হতে লাগল। দুধ ছাড়ানাে বাচ্চা পশুদের সমকক্ষতা করতে লাগল। বন্ধুগণ বকরিগুলোকে উটের সাথে চড়াতে লাগল। মাছ এবং গুইসাপকে বরাবর মনে করতে লাগল। প্রত্যেকেই স্বাভাবিকভাবে হায়েনার চরিত্র গ্রহণ করতে লাগল। নেতৃস্থানীয় লোকগণ চিতা বাঘের চামড়া পরিধান করতে শুরু করল। আর সাধারণ লােকেরা কবুতরের গলা বন্ধনীর মত জিঞ্জির নিজেদের গর্দানের উপর পরিধান করল। বড় লােকেরা এ কথা বুঝতে লাগল যে, তারা শুক পাখি থেকে অধিক সত্যবাদী এবং তাদের ছােটরা ঘুঘু পাখি থেকেও অধিক বিভ্রান্ত ও অপরাধী। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বৃদ্ধ দুই মশকধারিণী রমণীর মত বিবেচ্য হাতে লাগল। বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমানেরা সে গ্রাম্য লােকের তুল্য হয়ে গেল, যে হুনাইনের দুটি মােজা নিয়ে ফিরে এসেছিল। বুদ্ধিমানকে ‘আশকার' পাখির মত হয়রানি মনে হতে লাগল। শিক্ষার্থীদেরকে 'হুবারা' পাখির মত ব্যস্ত মনে হল। শ্রোতা। ব্যক্তি বলছিল যে, বন্য গাধা পাওয়া গিয়েছে তাে সকল শিকার মিলে গিয়েছে। আর সত্যের প্রতিচ্ছবি শীষদানকারী পাখির মত বারবার। বলছিল- হে নিকৃষ্ট পাখিরা! চুপ থাক। এ ঘটনা যখন আমার সামনে আসল, তখন আমি বললাম ফয়সালাকারীর গৃহে যদি স্বয়ং যাওয়া যায় এবং তীর যদি তার নির্মাণকারীকে দেয়া যায়, তাহলে বহু হেকমত বের হয়ে আসে। অধিকন্তু ঘােড় দৌড়ের সময়ই অগ্রগামী ঘােড়ার পরিচয় পাওয়া যায়। আর প্রত্যুষেই রাতভর পথচারীর প্রশংসা করা হয়। তারপর আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট এমন একটি কিতাব রচনা করার জন্য ইস্তেখারা করলাম, যা পশুপাখি সম্পর্কিত বিষয়াদির বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত হবে। আমি এ কিতাবটির নাম রেখেছি হায়াতুল হায়াওয়ান। আল্লাহ তা'আলা যেন এটাকে আমার জান্নাত লাভের ওয়াসিলা করে দেন।