একটি পরিবারের স্থায়িত্ব, সুখ-শান্তি ও সঠিক বিকাশ যে দু’জনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তারা হল পরিবারের মূল উপাদান স্বামী ও স্ত্রী। যে দু’জন নারী-পুরুষ মিলে নির্ধারিত নিয়মে আইনসম্মতভাবে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গঠন করে তারা স্বতন্ত্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা দু’টি সত্তা। বিয়ের কারণে তাদের কেউ অন্যজনের অস্তিত্বে বা মতামতে সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায় না, যাওয়া উচিতও নয়। তাদের উভয়েরই স্বতন্ত্র অবস্থান ও মতামত বিদ্যমান থাকে। এজন্য দরকার হয়। পরস্পরের প্রতি যথাযথ আস্থা-বিশ্বাস ও সম্মান রেখে সমঝােতা ও ঐকমত্য তৈরি করার।
অন্যদিকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে উভয়েরই দায়-দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। একজন অন্যজনের কাছ থেকে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি যেন অন্তহীন হয়ে ওঠে। এসব দায়িত্ব-কর্তব্য শতভাগ পালন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ফলে কখনাে কখনাে মতের অমিল, সম্পদের অপর্যাপ্ততা বা আত্মসম্মানবােধ ও মর্যাদার কম-বেশি হওয়ার কারণে পরিবারে অশান্তি ও সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এছাড়া বিয়ের সুবাদে দুটি পরিবারে আত্মীয়তার সম্পর্ক হওয়ায় উভয় পরিবারের চাওয়া-পাওয়াও এক্ষেত্রে কখনাে কখনাে বাড়তি চাপ তৈরি করে। সন্তানের বিষয়টিও কখনাে কখনাে বৈবাহিক জীবনে বড় ধরনের সংকট তৈরি করে। নবগঠিত পরিবারের সুখ শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার জন্য কখনাে কখনাে দম্পতির পিতা-মাতাকে প্রতিবন্ধক মনে করা হয়; যা কোনভাবেই সঠিক নয়। একান্নবর্তী পরিবারও কিছু সমস্যার কারণ হয়ে থাকে। কারণ যা-ই হােক না কেন দাম্পত্য কলহ বা বিরােধ একটি পারিবারকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, ভাঙ্গন এমনকি খুন খারাবী পর্যন্ত পৌছে দেয়।
‘পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম গ্রন্থে এসব অশান্তির কারণ চিহ্নিত করে এর যৌক্তিক সমাধান মানবিকতা ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে খুঁজবার চেষ্টা করা হয়েছে। বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অহর্নিশ ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী বিধি-বিধান যে কত প্রয়ােজন তারও বর্ণনা রয়েছে এখানে। দাম্পত্য জীবনে স্বাভাবিকতা অব্যাহত রাখতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী গৃহীত স্ত্রী বা স্বামীর কাজটি সঠিক ও যথার্থ হচ্ছে কি-না তা নির্ধারণে গ্রন্থটি সহায়তা করবে।