মানুষকে আল্লাহ তাআলা অনন্য সৃষ্টিকুশলতার মিশ্রণে সৃষ্টি করেছেন। তিনশত ষাট জোড়া হাড়ের ওপর ত্বক ও রক্ত-মাংসের যে প্রলেপ দিয়ে তিনি এই মানবদেহ গঠন করেছেন, সেই মানবদেহটি একটি অপূর্ব বিস্ময়ের সমষ্টি। দেহের এই সমষ্টি গঠিত হয়েছে অপরূপ কিছু অঙ্গসৌষ্ঠবের নান্দনিক মিলনে। আর এই সুন্দর সুনিপুণ মানবদেহের সবচেয়ে অপরিহার্য অঙ্গটি হলো মানুষের মুখ ও তন্মধ্যকার রসনা। মুখের ব্যবহার বহুবিধ। রসনা-সিক্ত মানুষের ভাষাই সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানবজাতিকে করেছে সম্পূর্ণ আলাদা, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও আভিজাতের অধিকারী। পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে বহুগুণ শক্তিধর অনেক প্রাণী আছে, কিন্তু তাদের ভাষাশৈলী নেই বলে মানুষের কাছে তারা পদানত। মানুষ তার ভাষার জোরেই করেছে জগত জয়, অন্য সৃষ্টিকে করেছে পদানত। ভাষার কল্যাণেই মানুষ হয়েছে বিভক্ত নানা গোত্রে, নানা রাষ্ট্রে এবং নানা প্রাসাঙ্গিক বিভাজনে। ভাষার কল্যাণেই বহু মানুষ হয়েছে স্রষ্টার নাফরমান, ইবলিশ ও ফেরাউনের মতো ঔদ্ধ্যত এবং কিছু মানুষ ভাষার বিনম্র সতত ব্যবহারে স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করে হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। ভাষা মানুষকে মানষত্বের পরিচয় এনে দিলেও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছে এর সদ্ব্যবহারে। তাই কোরআন-হাদিসে ভাষা ও রসনার সংযমী ব্যবহারের গুরুত্ব এসেছে। পরকালে মানুষের অসংযত ভাষার ব্যবহারই তাকে অধোঃমুখো করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করবে বলে হুঁশিয়ারী এসেছে। পরকালবিশ্বাসী মানুষের প্রধানতম দায়িত্ব হলো ভাষার সংযম ও মুখের ওপর লাগাম টেনে দেয়া। এই বিষয়ে হাদিসে অনেক তাগাদা এসেছে। সালফে সালেহিনগণ এর গুরুত্বের বিবরণ দিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁদের অন্যতম হলেন ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রহ., যিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সমাজনির্মাতা। সমাজের অধঃপতনের কারণগুলো চিহ্নিত করে তিনি যেসব অমর গ্রন্থ জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন তার অন্যতম হলো الصمت وآداب اللسا ‘মুখের ওপর লাগাম দিন’ নামের অনন্য অসাধারণ গ্রন্থটি। গ্রন্থটির অনূদিতরূপকে পাঠকের টেবিলে তুলে দিচ্ছি। বইটি আশা করি পাঠকহৃদয়কে আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।