একি আমার সৌভাগ্য? শৈশবেই বইয়ের সাথে আমার এক গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়৷ তারপর থেকে আজ অব্দি কত যে বই সংগ্রহ করেছি, পড়েছি— বাংলা, আরবী, উর্দু, ইংরাজি— তার কি আর ইয়ত্তা আছে? সুনির্দিষ্ট সংখ্যা, সত্যি বলছি, আমার অজানা৷ ক’জনই বা অমন করে পঠিত বইয়ের নাম-পরিমাণ হিশেব করে রাখে!
আমি তজ্জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞ হিদায়াতুল্লাহ ভাইয়ের প্রতি৷ ক্লাশের বইয়ের বাইরেও যে পড়ার মতো বহু বই রয়ে গেছে তিনিই সম্ভবত প্রথম জানিয়েছিলেন আমাকে৷ আমার এমন বই প্রেমের প্রতি আরও একজনের অবদানের কথা মনে না করলে নয়— আমার জান্নাত আপা৷ কুষ্টিয়া ভার্সিটির ছাত্রী সংস্থার তুখোড় নেত্রী ছিলেন এক সময়; আমার বড় মামার ছোট মেয়ে৷ তিনি আমাকে নিয়মিত খোঁচাতেন বই পড়ার জন্য৷ দারুন সব বই পড়তে দিতেন তার সংগ্রহ থেকে৷ তার ঘরেই প্রথম দেখেছিলাম— দেয়াল সমান উঁচু করে বই সাজিয়ে রাখে কেউ! বছর কয়েক আগে এই জান্নাত আপার যখন বিয়ে হয়ে গেল আমি চোখের জলে ভেসেছিলাম, একদমই অকারণ৷
এসব কথা বলছি আজ যে কারণে— তারা আমাকে দারুন সব বই পড়তে দিতেন সন্দেহ নেই৷ তারপরও আমার শৈশবের সেই কচি মন ভিন্ন কিছু বই খুঁজে ফিরত৷ যা আমাকে কখনও কাউকে এনে দিতে দেখিনি৷ একটু বড় হয়ে নিজেই যখন পছন্দ মতন বই কিনতে শুরু করলাম তখনও আমি ঠিক সেই বইগুলো খুঁজে পেতাম না— যেসব আমার তখনকার শিশুমন তালাশ করে বেড়াতো৷
তখনকার অনুভূত সেই শূন্যতা থেকেই জায়নামাজের জন্ম৷ এখনকার শিশু যারা তাদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন এসেছে, তারা আজ সেরকম ভাবে ভাবনা চিন্তা করে না যে ভাবনা সমূহে আমরা রাতদিন ভাবিত হতাম আমাদের শৈশবে৷ তাই চেষ্টা করেছি জায়নামাজে এখনকার শৈশব যাপনকারী শিশুদের চিন্তা জগতের প্রতিফলন ঘটাতে৷ কতটুকু পারলাম তা ছোট্ট পাঠকেরাই ভালো বলতে পারবে৷
ছোট্ট বন্ধুদের জন্য জায়নামাজ আমার প্রথম উপহার৷ শিশু পাঠকদের জন্য আমি প্রত্যহ ভাবনা তাড়িত হই৷ তাদের জন্য কিছু করার তাড়না আমার লেখক জীবনের শুরু থেকেই অনুভব করছি৷ আমার চিন্তা এবং বোদ্ধা ব্যক্তিদের পরামর্শে আগামির রত্নদের হাতে ক্রমান্বয়ে সুন্দর কিছু তুলে দিতে পারব বলে বিশ্বাস করি৷ এ পথে সবার সৌহার্দপূর্ণ ভালোবাসা কামনা করি, প্রবলভাবে৷